বরিশালে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে যানবাহনে ‘বিট বাণিজ্য’

Passenger Voice    |    ০৭:০৩ পিএম, ২০২৪-০৪-০৪


বরিশালে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে যানবাহনে ‘বিট বাণিজ্য’

বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় যানবাহনে ‘বিট বাণিজ্য’ ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি চক্র পুলিশের নাম ভাঙিয়ে বছরের পর বছর ধরে করছে এই বাণিজ্য। এসব চক্রের কারণে বাড়ছে অবৈধ গাড়ি, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে এই ‘বিট বাণিজ্য’ চালিয়ে যাচ্ছে বরিশাল জেলা মিশুক, বেবী টেক্সি, টেক্সিকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি নামে একটি সংগঠন। তাদের বিট বাণিজ্যের কারণে অবৈধ ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলছে বৈধ গাড়ির মতো।

সরেজমিন দেখা যায়, থ্রি হুইলার, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রো, পিকআপ, মিনি পিকআপ, ট্রাক অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা সবকিছুই চলে বিট বাণিজ্যের মাধ্যমে।

নাম প্রকাশে কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জানান, প্রতিমাসে পাঁচশ টাকার স্টিকার নিতে হয়ে। না নিলে পড়তে হয় মামলায়। প্রতিবাদ করলে গাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করা হয়। এটি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো যানবাহন রিকুইজিশন করার নিয়ম ট্র্যাফিক পুলিশের হলেও বরিশালে থ্রি হুইলার যানবাহনের রিকুইজিশন করে বরিশাল জেলা মিশুক, বেবী টেক্সি, টেক্সিকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সদস্যরা।

আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ড্রাইভারদের পুলিশি ঝামেলার ভয় দেখিয়ে সচল রাখে তাদের বিট বাণিজ্য।

সূত্র মতে, প্রায় দশ হাজার থ্রি হুইলার থেকে মাসিক পাঁচশত টাকা করে চাঁদা তোলে এই সংগঠন। এই গাড়িগুলো হলো সিএনজি, মাহেন্দ্রা ও গ্যাসে চালিত নীল রঙের গাড়ি। প্রত্যেকটি গাড়ির সামনে স্টিকার লাগানো দেখেই এই অভিযোগের প্রমাণ মেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির লাইসেন্স, ইন্স্যুরেন্স অথবা ফিটনেস কোনো কিছুরই দরকার হয় না। মালিক সমিতির স্টিকার থাকলেই সব মাফ হয়ে যায়। এ বাণিজ্যের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় ঐ সংগঠনের নেতারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আহমেদ বাবু বলেন, আমি কিছেই জানি না। যা করার সাধারণ সম্পাদক দুলাল করে। আপনারা দুলালের সঙ্গে কথা বলুন।

বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দুলালকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

এদিকে মাইক্রোবাস সমিতির নামে গাড়ি প্রতি ১২শ করে টাকা হাতাচ্ছে একটি চক্র। দুই শতাধিক গাড়ি থেকে পুলিশের নাম করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে এ টাকা। বহুবছর যাবত দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের নাম করে টাকা তুলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এ চক্রটির বিরুদ্ধে।

একাধিক রেন্ট-এ কার ড্রাইভার জানান, বিট বাবদ মাসিক ১২শ টাকা না দিলে পড়তে হয় পুলিশি ঝামেলায়। তবে বিট করে নিলে বরিশাল জেলা ও বিভাগে গাড়ি চালাতে কোনো সমস্যা হয় না।

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের সামনে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সমিতি। সেখানেও একই চিত্র। সমিতি ও পুলিশকে টাকা দেওয়ার নামে একটি চক্র করছে তোলা বাণিজ্য।

অভিযোগ রয়েছে পিকআপ, মিনি পিকআপ ও ট্রাক থেকেও মাসোহারা তোলেন কয়েকজন ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্য।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের ডিসি তানভির আরাফাত।

তিনি বলেন, পুলিশের নামে টাকা পয়সা উঠানোর প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সমিতির নামে টাকা পয়সা উঠানোর বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। বিট বাণিজ্যের সঙ্গে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে।  

 

প্যা.ভ/ত